মাস্টার রোলে চাকরির আবেদন করার সময় ঢাকার একটি স্কুল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি নেন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষে দেলোয়ার। কিন্তু ২০০৬ সালে চাকরি স্থায়ী করার সময় কুমিল্লা বোর্ডের সার্টিফিকেট জমা দেন তিনি। জানা যায়, অন্য একজনের সার্টিফিকেটে নিজের নাম বসিয়ে তৈরি করা ছিল ওই সার্টিফিকেট। আবার প্রথম সার্টিফিকেটে বাবার নাম শিশু মিয়া থাকলেও পরের সার্টিফিকেটে দেলোয়ারের বাবার নাম আব্দুল ওহিদ। আর দুই সার্টিফিকেটের মার্কশিটে বিভাগ দুই রকম। কিন্তু সিবিএ নেতা হওয়ায় এই অসঙ্গতি তার চাকরির ক্ষেত্রে কোনো প্রভাবই ফেলেনি। শুধু তাই নয়, দেলোয়ার গত বছর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এনওসি নিয়ে মে মাসে সপিরবারে যান অস্ট্রেলিয়া সফরে। আর জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদ অর্জন করার অভিযোগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। বর্তমানে বিষয়টি অনুসন্ধান চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
দেলোয়ারের অবৈধ সম্পদের বিবরণ ঃ
দেলোয়ারের বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাকরি জীবনে প্রথম মায়ের নামে টাঙ্গালি হাউজিং এস্টেটে একটি প্লট বরাদ্দ নেন দেলোয়ার। এরপর প্লটটি দ্রুত বিক্রি করে দেন। এরপর তার স্ত্রী নুসরাত জাহানের নামে ২০১৪ সালের ৫ মার্চ বয়রা হাউজিং এস্টেট, খুলনায় ব্লক নং-এ প্লট -৪৫-এর ৩ কাঠা জমি শিল্পী/সাহিত্যিক কোটায় বরাদ্দ করে নেন। তার স্ত্রীর প্লটের জন্য আবেদনপত্রে স্বামীর নাম লুকিয়ে পিতার নাম শাহজাহান উল্লেখ করেছেন। অথচ শিল্পী হিসেবে বেতার/টেলিভিশনের কোনো সনদ দাখিল করেনি।
ওই প্লটের প্রথম কিস্তির ৬ লাখ টাকা পরিশোধের পর পরবর্তী বছরেই দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির মোট ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, তথা সমুদয় মূল্য বাবদ ১৯ লাখ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকা মাত্র এক বছরে পরিশাধ করেছেন। পরে এই প্লটটি আবার ২০১৫ সালের ২৮ জুন জোবায়ের হোসেন নামে একজনের কাছে বিক্রি করে দেন। দেলোয়ার কুষ্টিয়া হাউজিং এস্টেটে তার নিজের নামে সাড়ে ৩ কাঠা জমি বরাদ্দ নেন। ওই প্লটের দাম দুই কিস্তিতে প্রায় ১৪ লাখ টাকা পরিশোধ করে আবার সেটি ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের এক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় তার শ্যালকের কাছে কোটি কোটি টাকা পাচার করেন। পরে এই টাকা রেমিট্যান্স দেখিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। অথচ তার শ্যালক পড়ালেখার জন্য সেখানে গিয়েছেন। তিনি লালমাটিয়ায় ব্লক বি’তে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যা অন্যের নামে। লালমাটিয়া হাউজিং এস্টেট, ব্লক বি (বিটিআই বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস) ঠিকানার বিল্ডিংয়ে ৪/৫ম তলার ফ্ল্যাটটি ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় কেনেন। কিন্তু বাড়িটি নিজের নামে কেনেননি। এ ছাড়া ২/৫ লালমাটিয়া কম্প্রিহেনসিভ হাউজিংয়ের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে তার একটি বড় ফ্ল্যাট আছে। মোহাম্মদপুর হাউজিং এস্টেটের ই ব্লকের এ/১৫ নম্বর প্লট বাড়ির ওপর নির্মিত ভবনে তার বোনের নামে একটি ও দেলোয়ার নিজের নামে তিনটি ফ্ল্যাট কেনেন। এর মধ্যে আবার দুইটি ফ্ল্যাট ডিশ/ইন্টারনেট ব্যবসায়ী শিপনের কাছে বিক্রি করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দেলোয়ার হোসেন সেবাপ্রত্যাশী বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঘুষ নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েন। ব্যাংক হিসাববিহীন মোসা. নুসরাত জাহানকে বিয়ে করার পর এইচআই প্রোপার্টিজের ৬০ শতাংশ শেয়ার কিনে দেন। এইচআই প্রপার্টিজ মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়ায় বর্তমানে ২০টি ভবনের নিমার্ণ কাজ করছেন। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরী স্কুলের পাশে ইকবাল রোডে লাক্সারি দোতলা লিগনাইট রেস্টুরেন্টে দেলোয়ার ও তার স্ত্রীর ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। রিং রোডে ডাচ বাংলা ব্যাংকের পেছনে তার বোনের নামে একটি চার তলা ও ছয় তলা ভবন কিনেছেন। আদাবর ৬ নম্বর রোডে একটি বাড়ি কিনেছেন। বছিলা ব্রিজের ওপারে মধুমতি সিটিতে দেলোয়ারের ১০ কাটা জমি রয়েছে। সাফা সিটিতে রয়েছে আরও ১০ কাঠা জমি।
এ ছাড়া দেলোয়ারের রয়েছে একটি ল্যান্ডক্রুজার, হ্যারিয়ার ও প্রিমিও গাড়ি। গ্রামের বাড়ি কোম্পানিগঞ্জের ত্রিশ গ্রামে প্রায় এককোটি টাকা খরচ করে বাড়ি নিমার্ণ করেছেন। গ্রামের বাড়ির বীণা সিনেমা হলের পেছনে ২০ শতাংশ জমি তিন কোটি টাকা দিয়ে কিনেছেন তিনি।
এ বিষয়ে দেলোয়ারকে একাধিকবার তার ব্যক্তিগত ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। একাধিকবার মেসেজ পাঠানো হলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তার অফিসে একাধিকবার গিয়েও সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হায়দারকে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।